Sunday, November 6, 2011

মডেল আদৃতার মৃত্যু : অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের পক্ষ থেকে একটি ময়নাতদন্ত

মডেল আদৃতা মারা গেলেন। চরম অনাদরে তার লাশ পড়ে রইলো একটি বাড়ির চারতলার সিঁড়িতে। অনাদরেই দাফন হলো তার, কোনো পোস্টমোর্টেম হলো না। পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখতেও পেলেন না তার মরদেহ। লাশের ছবি দেখে দেখে স্বজনেরা শনাক্ত করেছেন তাকে। কী নির্মম এই পরিণতি!
পুলিশের নিস্পৃহতা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে কথাও উঠেছে। কালের কণ্ঠ প্রশ্ন তুলেছে- “কলগার্ল পরিচয়ে কেন কবর হলো মডেল আদৃতার?” জবাব নেই এই প্রশ্নের। আদৃতা যদি একজন কলগার্ল কিংবা পতিতাও হয়ে থাকে, তবু একটি প্রাণের মৃত্যু নিয়ে কোনো ভাবনা নেই আমাদের রাষ্ট্রের?

মূলধারার গণমাধ্যম এবং প্রশাসন যখন ভিন্নভাবে, ভিন্নখাতে চিন্তা করছে এই মৃত্যুটিকে, তখন আদৃতার ফেসবুক অ্যাক্টিভিটি অনুসরণ করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা তৈরি করেছেন ভিন্ন একটি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট।

যেসব ব্যক্তিদের সাথে মডেল আদৃতার খাতির ছিল, তাদের অন্যতম আনন্দদিন পত্রিকার সম্পাদক বাশারুল ইসলাম মুন্না। মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগেও ফেসবুকে তার সাথে চ্যাট করেছেন আদৃতা। এর আগেও তাদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। কথাবার্তা খুবই সন্দেহজনক। মডেলিং এবং ক্যারিয়ারে উন্নতি করার জন্য সারা রাত মুন্নার সাথে থাকতে হবে আদৃতাকে। মুন্নার এই প্রস্তাবের জবাবে আদৃতা জানায়- ফ্যামিলির সাথে থাকে সে, সারা রাত থাকা সম্ভব না, তবে সন্ধ্যায় হলে পারবে (ছবি-১)। পরে অবশ্য আসতে রাজি হয় সে, জানায়- রাত ১০ টা পর্যন্ত থাকবে (ছবি-২); রাতযাপনের কারণ হিসেবে জানায়, হাতে টাকা নেই, টাকা দরকার।

ছবি-১


ছবি-২


টাকার সংকটটা আদৃতার ছিল বরাবরই। নতুন মডেলদের প্রায় সবারই এটা একটা সাধারণ সমস্যা। আদৃতার ফেসবুক বন্ধু তাহেরা ফাতেমার সাথে কথোপকথন (ছবি-৩) থেকে জানা যাচ্ছে, ডেইলী স্টারের ঈদ ফ্যাশন ম্যাগাজিন ২০১১ এবং আইস টুডেতে ফ্যাশন হাউজ “শাঁওলী’জ ডিজাইন”-এর পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য মডেল হন আদৃতা এবং হৃদি। ডেইলী স্টারের ঈদ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছাপা হয়েছে সেই ছবি, আর শাঁওলী’জ ডিজাইনের ফেসবুক পেজে এখনো প্রচ্ছদ ছবিটা আদৃতার। এই মডেলিং-এর জন্য যোগাযোগটা হয় হৃদির মাধ্যমে, কথা ছিল ২ জন মডেল ২৫০০ করে ৫০০০ টাকা পাবেন। কিন্তু হৃদির মাধ্যমে যেহেতু যোগাযোগ হয়েছে কাজেই, সে সেখান থেকে ১০০০ টাকা কেটে রাখে। আদৃতার হাতে আসে মাত্র ১৫০০ টাকা।

ছবি-৩































শুধু যে অর্থেই প্রতারিত হন আদৃতারা তাই নয়, প্রতারিত হন মডেলিং করতে গিয়েও। যেমন মুন্না কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মডেলকে সারা রাত তার সাথে থাকতে বলেন, তেমনি কাজের জন্য অনেকে প্রেমের অভিনয়ও করে মডেলের সাথে। তেমনটিই করেছে এই মডেলের কথিত প্রেমিক রেহান। আদৃতার ফেসবুক বন্ধু ফয়সাল তুষারের সাথে কথোপথন থেকে জানা যাচ্ছে, তার এই প্রেমিক রেহান, যিনি নিজেও একজন মডেল, সে কাজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন নারী মডেলের প্রেমিক সেজে প্রেমের ভাণ করে (ছবি-৪)। দুঃখজনক হলেও সত্যি আদৃতা ভেবেছে, সত্যি সত্যিই হয়তো তাকে ভালবাসে রেহান, রেহানের সাথে রাতের পর রাত কাটিয়েছে সে, বাড়িতে বলেছে থাকছে বন্ধুর বাসায় (ছবি-৫)। অথচ ফেসবুকে যখন রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে “ইন এ রিলেশনশিপ উইথ রেহান” লিখেছে তখনই ফেসবুকের বন্ধুতালিকা থেকে আদৃতাকে রিমুভ করে দিয়েছে রেহান, শুধু তাই নয় নানা জনকে দিয়ে ফোন করিয়ে আদৃতার প্রোফাইল থেকেও রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সরিয়ে নিতে করতে বাধ্য করিয়েছে (ছবি-৬)। আদৃতার আরেক ফেসবুক বন্ধু ফয়েজ উদ্দিন সিফেল-এর সাথে কথোপথন থেকে জানা যাচ্ছে, শুধু একসাথে থাকাই না, একসাথে ইয়াবাও খায় দুজনে। ইয়াবা খাওয়াকে তারা বলে পিপি খাওয়া অথবা ক্লাস করা।

ছবি-৪

ছবি-৫
ছবি-৬


কিন্তু এই বয়ফ্রেন্ডকেই শেষমেষ গোপনে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে আদৃতা। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরই বুঝতে পারে, আসলে ভুল করেছে সে। উপরন্তু কোনো এক ঘটনায় (সে ঘটনা অবশ্য এখানে অনুল্লেখিত) তাকে মারেও রেহান। কাজেই ডিভোর্স দিতে চায় তাকে। ব্যবসায়ী ফারহান আহমেদ ওরফে ‘খালুজান’-এর সাথে আলাপে এসব জানায় আদৃতা। ফারহান ডিভোর্সের প্রক্রিয়া বাৎলে দেয় আদৃতাকে (ছবি-৭)। নিউ মার্কেটে ‘সাজ সম্ভার’ নামে একটা দোকানের মালিক ফারহানের মোহাম্মদপুরে 'লরেঞ্জো' নামে ৩ টি সাইবার ক্যাফে আছে। কিন্তু এই ব্যবসা করে কক্সবাজারে ফাইভ স্টার হোটেলের মালিক কি করে হলো, সেটা একটা রহস্য। অবশ্য সেই রহস্য দূর হয়ে যায় আদৃতার সাথেই আরেকটি আলাপচারিতায়। সেখানে আদৃতাকে বনানীর একটি হোটেলে কিছু ফটো তোলার প্রস্তাব দেয়, স্বল্প বসনে তুলতে হবে সেই ছবি (ছবি-৮), বিশেষ জায়গায় গিয়ে বিশেষ ধরনের এই ছবি তোলার নাম ‘পিকনিক’। বনানীর হোটেলে তোলা সেই ছবির কিছু কিছু পাওয়া যায় আদৃতার ফেসবুক প্রোফাইলে, আবক্ষ নগ্ন সে, কোনো কোনোটাতে নিম্নাংশে একটি তোয়ালে জড়ানো, কোনো কোনোটাতে নিম্নাংশ একেবারেই অস্পষ্ট (ছবি-৯)। এই ছবিগুলো আদৃতাকে দিয়েছে ফারহান, কিন্তু এগুলোর বাইরে আরো বেশ কিছু ছবি তুলেছে সে, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সেগুলো কোনোভাবেই দিতে রাজি হয়নি ফারহান।

ছবি-৭

ছবি-৮


































ছবি-৯


ঘটনার এখানেই শেষ নয়। কয়েকদিন পর আদৃতাকে আবারো ছবি তোলার কথা জানায়, এবারে কক্সবাজারে। আদৃতা যেতে পারবে না জানালে ফারহান বলে- “তা হলে তোমার মতো অসভ্য পোজ দিতে পারবে এমন কোনো নারী মডেল দাও” (ছবি-১০)। টাকার কথা শুনে শেষ পর্যন্ত আদৃতা নিজেই রাজি হয় (ছবি-১১)। কিন্তু শর্ত থাকে কোনোভাবেই তার বিবাহিত স্বামী রেহানকে জানানো যাবে না। কক্সবাজারে তিন দিন থাকার ব্যাপারটাকে বাড়ি থেকে রাগ করে কোনো বন্ধুর বাসায় থাকা এবং অভিমানে ফোন বন্ধ করে রাখা বলে চালিয়ে দেয় আদৃতা। পিকনিকে প্রতিবার মদ নিয়ে যান ফারহান, কিন্তু রোজার মাস বলে আগস্টে মদ না খেয়ে গাঁজা খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা (ছবি-১২)। শুধু তাই নয়, ইয়াবাসক্ত আদৃতা ফারহানকেও ইয়াবা সেবনে প্রলুব্ধ করে (ছবি-১৩)। কক্সবাজারের ছবিগুলোতেও আগের মতোই নগ্ন, অর্ধনগ্ন দেখা যায় আদৃতাকে। এবারেও আগের মতোই বেশ কিছু ছবি বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও দেয়নি ফারহান, জানায়- “স্লো সাটার স্পিড থাকার কারণে ছবি নষ্ট হয়ে গেছে” (ছবি-১৪)। আদৃতাও আর পীড়াপীড়ি করেনি। জানা যায় না, তবে অনুমান করা যায়, এইসব ছবি (এবং হয়তো ভিডিও) নিয়ে ভালভাবেই ফারহানের খপ্পরে পড়ে আদৃতা। তার জন্য 'অসভ্য মেয়ে' খুঁজতে হয় তাকে। বন্ধু আসাদুজ্জামান আসাদকে লেখা মেসেজে তাই আদৃতা অনুরোধ করছে- “একটা মাল দাও না নিউ” (ছবি-১৫)।

ছবি-১০

ছবি-১১


  


ছবি-১২


































ছবি-১৩


































ছবি-১৪




























 




ছবি-১৫

































শেষ রক্ষা হয়নি অবশ্য। বিপত্তি বাধায় রেহান। বুঝতে পারে, ফারহানের সাথে বিশেষ কিছু ঘটছে আদৃতার। ফেসবুক থেকে ফারহানকে রিমুভ করতে বলে। আদৃতা সেটা করেও। মৃত্যুর এক বা দু’দিন (যেহেতু মৃত্যুর সঠিক সময় নিশ্চিত হয়নি এখনো) আগে ফারহানকে পাঠানো শেষ ফেসবুক মেসেজে আদৃতা জানায়- রেহান ফারহানের সাথে তার সম্পর্ক মেনে নিতে পারছে না, তাই তাকে ডিলিট করে দেয়া হলো (ছবি-১৬)। একই দিন ফয়সাল তুষারকে আদৃতা জানায়, রেহানের সাথে গোপনে বিয়ের ঘটনা বাসায় জানাজানি হয়ে গেছে, এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হচ্ছে (ছবি-১৭)।

ছবি-১৬
ছবি-১৭

































এই ঘটনার পরের দিন থেকেই নিখোঁজ আদৃতা। তারপরের ঘটনা...

3 comments:

  1. really sad........but the who collected this information really appreciable..........

    ReplyDelete
  2. একটি জিনিস নিয়ে খটকা লাগলো(!)

    Munna Anandadidn নামে যে প্রোফাইলটি এখানে দেখানো হয়েছে তার আসল ফেইসবুক প্রোফাইলে নামের বানান দেয়া আছে এভাবে Munna Anondadin (!) বিষয়টা রহস্যের সৃষ্টি করছে!

    ReplyDelete
  3. I smell something fishy here. cant mach the dates with the screen shots. and there are lots of mismatch with the previous dates. todays newspaper says that, "the laptop of the girl is missing, maybe the killer taken it". in that case the killer must have written this blog.

    ReplyDelete